শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০২:০১ অপরাহ্ন
আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিপক্ষতা আছে, আছে মতানৈক্য, সেই সাথে আছে দুর্নীতিবাজ আর কালোবাজারির আধিক্য। এমন একটি পর্যায় নেই যেখানে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট নেই।
তারপরেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ছিলো সচল। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিলো বীরদর্পে। অর্থনীতিতে এসেছিলো একটি স্থিতিশীলতা। অথচ বাংলাদেশের অর্থনীতি বলাচলে সবটাই রপ্তানি নির্ভর। তার সাথে রয়েছে রেমিট্যান্স প্রাপ্তি।
অর্থনীতির এই সারাংশে মনে হচ্ছে বড় ধরনের ধ্বস নেমে আসবে। তবে এই ধ্বসের জন্য বাংলাদেশ একক ভাবে দায়ী কোন ভাবেই নয়। বৈশ্বিক ভাবে অর্থনীতির ধ্বস বাংলাদেশকে প্রভাবিত করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের বিষাক্ত থাবায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলেই মনে হয়। এই পরিবর্তন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে অর্থাৎ সার্বিক বিষয়ে আসবে। সার্বিক বিষয়ের এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি নাড়া দেবে পৃথিবীর অর্থনীতিকে।
আমরা যদি ২য় বিশ্বযুদ্ধের দিকে তাকাই সেখানে দেখতে পাই, ২য় বিশ্বযুদ্ধের ফলে পৃথিবীব্যাপি যে মৃত্যুপুরীর জন্ম হয় তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে আধুনিক একটি পৃথিবী। তবে সেই পৃথিবী হয়ে যায় ক্ষমতা ও অর্থের দিকথেকে বিভাজিত।
বিশ্বযুদ্ধের পরপরই সমগ্র দুনিয়াতে নেমে আসে অর্থনৈতিক ধ্বস, বলাচলে পৃথিবীর মেরুদণ্ডই ভেঙে যায়। শুরু হয় ফিরে আসার অসম প্রতিযোগিতা। মেরুদণ্ড সক্ষমতা বিনির্মানে সামরিক সক্ষমতা সম্পন্ন দেশ সমূহ পৃথিবীকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। এবং একটি ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিজেদের গুছিয়ে নেয়। দেশে দেশে যুদ্ধ, সামাজিক পার্থক্য তৈরি, অন্যদেশের সম্পদ দখল, ব্যাবসার নামে অন্যদেশকে জিম্মি করে ফেলা এবং সেই দেশের অর্থনীতি দখল ইত্যাদির মাধ্যমে সমর শক্তিতে বলীয়ান দেশগুলো অন্যদেশগুলোকে চেপে ধরে। ছোট ছোট দেশগুলো তাদের কুটনৈতিক সক্ষমতা ও মেধা দিয়ে পরবর্তী সময়ে নিজেদের পুনর্গঠিত করে। যার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
বর্তমান বিশ্বে করোনা ভাইরাস যে বিপর্যয় নিয়ে এসেছে সেখানে কোন দেশে কতজন মানুষ মারাগেলো সেটা কোন বিষয় নয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের অর্থনীতি ধ্বস আর করোনা ভাইরাসের অর্থনীতি ধ্বস এক নয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধ সমগ্র পৃথিবী মৃত্যুপুরীর সাথে সাথে হয়েগিয়েছিলো ধ্বংস। স্থান, স্থাপনা, শিল্প, কল, কারখানা অর্থাৎ অর্থ উৎপাদনের সকল উৎস গুড়িয়ে গিয়েছিলো।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস আক্রমণে পৃথিবী শুধু মৃত্যুপুরীতে পরিনত হয়েছে। পৃথিবীর অর্থনীতি ও বিজ্ঞান সবই আছে, আছে আধুনিকতা, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি কিন্তু মানুষ বাঁচিয়ে রাখার কোন উপায় নেই, শক্তি নেই, ক্ষমতা নেই। মানুষ অসহায়ের মতো কাঁদছে, ইটালি, আমেরিকা, চীন জাপানের মতো অতিকায় দাম্ভিকতা আজ সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। অর্থনীতি আর বিজ্ঞান মিলেও মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা যার ফলে মানুষের মধ্যে প্রকৃতির উপর থেকে যে বিশ্বাস চলে গিয়েছিলো, প্রকৃতিকে ক্ষতবিক্ষত করার যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিলো, সৃষ্টিকর্তার উপর থেকে যে বিশ্বাস হারিয়েছিলো বা লোক দেখানো বিশ্বাসের প্রবনতা সীমাহীন হয়েছিলো সেই স্থানে আঘাত লেগেছে। মানুষ এখন ভাবতে বসেছে কোথাও একটা গলদ হয়েছে, কোথাও একটা মারাত্মক ভুল হয়েছে, কোথাও না কোথাও সীমালঙ্ঘন হয়েছে।
অর্থনীতি ও বিজ্ঞানের সক্ষমতা থাকলেও করোনা আক্রমনের সবচেয়ে বেশি কার্যকর পদক্ষেপ হলো মানুষকে মানুষ হতে আলাদা করে রাখা, নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ হয়ে থাকা। এবং নিজেদের সতর্কতা সরূপ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। যারফলে স্থবির হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক সকল প্রকার ব্যবসা বানিজ্য। যারফলে একদেশের সাথে অন্যদেশের আমদানি ও রপ্তানি সকল চুক্তি বাতিল হয়ে যেতে বাধ্য। এবং সেই সাথে দেশের অভ্যন্তরে শিল্প, কলকারখানার চাকা থেমে যাবে ও গেছে এমনিতেই।
বাংলাদেশ রপ্তানি নির্ভর দেশ, যার প্রধান উপাদান গার্মেন্টস সেক্টর। উক্ত গার্মেন্টস ক্রয় করার যদি মানুষই না থাকে তাহলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি ধরে রাখার জন্য যে র্যামিট্যান্স এবং সেই রেমিট্যান্স এর যারা কারিগর তাদের জীবনেও নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা। বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি মন্দার কারণে তারাও সিদ্ধান্ত নেবে ছাটাই পদ্ধতির, নতুন কর্মি সংযোজন না করা এবং বেতনের কাটতি।
যারফলে বাংলাদেশ অঅর্থনীতি বিশ্বের সাথে ধরে রাখতে চাপে পড়তে হবে এটাই বাস্তব।
সেই সকল দিক বিবেচনায় রেখে রপ্তানির নতুন কোন ইভেন্ট অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে এবং অর্থনীতি নিয়ে সুদুরপ্রসারি বাস্তবসম্মত উপায় নির্ধারণ করতেই হবে। এখন থেকে বাংলাদেশকে অবশ্যই সেই ভাবনা মাথায় নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। টুটি চেপে ধরতে হবে দুর্নীতির সকল পথ। অজ্ঞ অথর্ব , অতিকথন রাজনীতিবিদ দিয়ে সেটা কতটা সম্ভব সেটা আল্লাই ভালো জানে । একমাত্র ভরসা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ।
তেলবাজি না করে, গড্ডালিকা প্রবাহে না ভেসে, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশ আবার দ্বিগুণ উৎসাহে পথ চলবে সেটাই কাম্য।
আমি বা অন্যকেউ থাকবো কি না জানিনা, কিন্তু আমাদের সন্তানেরা থাকবে, আমাদের প্রজন্ম থাকবে। তারা যেন অসহায় হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ।
আর এই কাজে সবচেয়ে বড় বাঁধা স্বার্থপর রাজনীতি ও দুর্নীতিগ্রস্থ কালোবাজারি ও অর্থপাচারকারি।
আধুনিক সক্ষম দেশগুলি সেই ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে যে ভাবে অন্য ছোট দেশগুলিকে চুষে নিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছিলো, এবারই তাই হবে। তারা তাদের নেটওয়ার্ক আরো সচল করার চেষ্টা করবে আবার ঘুরে দাঁড়াতে , চির বেঈমান বাঙালি তাদের নিকট আরো চড়া দামে বিক্রি হবে না সেটা ভাবা হবে বড় ভুল।
এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে, দুর্নিতীবাজ কখনই তার দুর্নীতি দেশের জন্য করে না । দেশের চিন্তা মাথায় থাকলে সে দুর্নিতী করতোই না ।
ভালো থাকুক বাংলাদেশ, এগিয়ে যাক বাংলাদেশ, নিরাপদ হোক আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ।