মো. আবদুর রউফ:
ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা সহ ৬টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এতে পানির স্রোতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে গ্রামীণ সড়ক। একই সড়ক বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়নি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। অর্থ বরাদ্ধের আশায় কালক্ষেপণ করতে করতে সে সড়ক বন্যায় আবার আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সড়ক যোগাযোগে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে। এমতাবস্থায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার পূর্ব হাচিনসনপুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা কাউসার আজিজীর উদ্যোগে সংস্কার করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয় সে সড়কের একাংশ।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় ইমামের নেতৃত্বে সড়ক সংস্কারে যোগ দেয় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এলাকার ছাত্র ও যুবকরা। তারা ভেঙে যাওয়া সড়কের বিভিন্ন অংশে সাববেজ এবং কংকর বসিয়ে চলাচলের উপযোগী করে তোলে। এতে সমাজে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন ইমাম কাউসার আজিজী। আশপাশের ভেঙে যাওয়া সড়ক রয়েছে আরও ৫-৬টি অংশে। ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে তাও সংস্কারের কথা জানান তিনি।
পূর্ব হাচিনসনপুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা কাউসার আজিজী বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় সড়কটি ভেঙে যায়। কিন্তু এটি যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন ছিল ততটুকু সংস্কার করা হয়নি। ফলে এবারের বন্যায় তা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমতাবস্থায় এ সড়কে যান চলাচলে অসুবিধা হচ্ছিল। সরকারি উদ্যোগের আশায় না থেকে আমরা নিজেরাই উদ্যোগ নেই যে এলাকার ছাত্র এবং যুবকদের নিয়ে এটি আমরাই সংস্কার করব। তাছাড়া হাদীস শরীফে জনসাধারণের কষ্ট লাঘব এবং উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এসব কাজে অনেক সোয়াবের ঘোষণাও রয়েছে। এ ভাবনা থেকেই মুলত সড়ক সংস্কার করা। আরও কিছু ভাঙ্গা অংশ রয়েছে সেগুলোও সংস্কার করা হবে।’

সড়ক সংস্কারে অংশ গ্রহণ করা পূর্ব হাচিনসনপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আজগর আলী, মো. আবু কালাম, আলী হোসেন ও মো. শেখ ফরিদ বলেন, ‘বন্যায় সড়কটি ভেঙে অবস্থা খারাপ ছিল। ভালমতো অটোরিকশা টমটম চলতে পারতোনা। যার কারণে এলাকার মানুষের অনেক কষ্ট হতো। আজকে আমাদের ইমাম সাহেবের উদ্যোগে আমরা এ সড়কটি সংস্কার করি। এখন অনায়াসে যেকোনো গাড়ি এ ভাঙ্গা অংশ পার হতে পারবে। আরও কিছু ভাঙ্গা সড়ক রয়েছে আমরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সেগুলো সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
পূর্ব হাচিনসনপুর জামে মসজিদের সভাপতি হাজী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ইমাম সাহেবের উদ্যোগে সড়ক সংস্কারের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। নিঃসন্দেহে এটি খুবই ভাল উদ্যোগ। এ কাজটি আমাদের এলাকার জনপ্রতিনিধিদের করা উচিত ছিল কিন্তু ইমাম সাহেবের নেতৃত্বে সেটা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমি মনে করি এতে করে অন্যান্য মসজিদের ইমামরা ও যুবকরাও সামাজিক ভাল কাজে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হবে।’
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। একজন ইমাম অনেক সম্মানিত মানুষ। ইমামরা সমাজ সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের সাথে আগে যোগাযোগ করলে আমরা এলজিইডির মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতাম। আমি ইমাম সাহেব সহ যারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সড়ক সংস্কারে অংশগ্রহণ করেছেন আমার অফিসে তাদের আমন্ত্রণ জানাব।’ বাকি ভাঙ্গা অংশগুলো এলজিইডির মাধ্যমে কাজ করাবেন বলে জানান ইউএনও।