1. m.a.roufekhc1@gmail.com : alokitokha :
কেন বিদেশীরা দলে দলে ঢাকা ছাড়ছেন? - আলোকিত খাগড়াছড়ি

কেন বিদেশীরা দলে দলে ঢাকা ছাড়ছেন?

  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০

মতিউর রহমান চৌধুরীঃ

উড়োজাহাজ ভর্তি করে দলে দলে বিদেশীরা ঢাকা ছাড়ছেন। এরমধ্যে রয়েছেন শতাধিক কূটনীতিকও। এটা নতুন কোন খবর নয়। বাসি হয়ে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু আমরা কি একবারও তলিয়ে দেখেছি তারা কেন বেহেস্ত ছেড়ে দোযখে যাচ্ছেন? দোযখ বলছি এই কারণে, যেসব দেশে তারা যাচ্ছেন সেসব দেশে মৃত্যুর মিছিল এখন অনেক লম্বা। প্রতিদিন কম করে হলেও দুই হাজার লোক মারা যাচ্ছে। আর আমাদের দেশে গত এক মাসে মারা গেছে মাত্র ষাট জন। আক্রান্ত দুই হাজারেরও কম।

আমার মনে হয়, আমরা এটা জানার চেষ্টা করিনি তাদের কাছ থেকে। সম্প্রতি ঢাকা ছেড়ে গেলেন এমন একজন বিদেশী কূটনীতিকের সঙ্গে কথা হয়েছিল। যিনি বাংলাদেশকে নিয়ে কথায় কথায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বলেন এদেশের মানুষ বন্ধুবৎসল। শুনেছি পোস্টিং শেষে দেশে ফেরার সময় কার্গো করে উপহার সামগ্রী নিয়ে যেতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, যেহেতু একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছি। তাই কূটনীতিকের মতই বলবো। আপত্তি নেই। কিন্তু আসল রহস্য কি? কেন চলে যাচ্ছেন? বললেন, যে দেশে টেস্ট নিয়ে এত অনীহা, সে দেশের বাস্তব চিত্র কি তা জানার সুযোগ আছে কি? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিন পর্যালোচনা করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন কোথাও যেন সত্যটা লুকিয়ে রয়েছে। এদেশে টেস্ট কম, আক্রান্ত বেশি। বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় শীর্ষে বলতে পারেন। তাতে কী? আমরাতো নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি। বিপদটা এখানেই। চারপাশে ভাইরাস রেখে আপনি কিভাবে বলেন নিয়ন্ত্রণ হয়ে গেছে সবকিছু। বেশীরভাগ জেলায় টেস্টের সুবিধাই নেই। কীটও পৌঁছেনি। সেখানে কি করে বলা হচ্ছে সব ঠিক, বিলকুল ঠিক! এ কারণে ঢাকা ছাড়ার প্রয়োজন আছে কি? আছে, অবশ্যই আছে।

প্রসঙ্গক্রমে আবারও বললেন, যে দিন যায় ভালই যায়। সামনের দিনগুলো ভয়ংকর। কিসের ভিত্তিতে এটা বলছেন? সবকিছু কি বলা যায়! তবে এটুকো বলতে পারি, আগামী মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য বিপদজনক সময়। জাতিসংঘের রিপোর্ট আপনি মানতে পারেন কিংবা নাও মানতে পারেন। তাতে কি যায় আসে। তবে এই রিপোর্টকে এক কথায় উড়িয়ে দেয়ার মধ্যে আবেগ আছে, বাস্তবতা নেই। জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া রিপোর্ট দেখার পর এমন ধারণা দেয়া হলো এটা আজগুবি, চাঞ্চল্য সৃষ্টির প্রয়াশ। এখন কি দেখা যাচ্ছে? এখন প্রতিদিনই দেশটা লকডাউনে চলে যাচ্ছে। দৌড়ে দৌড়ে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। কূটনীতিকের প্রশ্ন- মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আপনি কি বলতে পারবেন? অনেক দেশই সত্য প্রকাশ করছেনা। এতে কি বিপদ কমেছে, বা কমবে? বরং বাড়বে। কারণ মানুষ সচেতন না হলে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে আপনি মুক্তি পাবেন না। এরপর কি?
মি. চৌধুরী, আপনিতো দেখছি আমার সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করলেন। সরি, আমি তা করছিনা। জানার কৌতূহল থেকে প্রশ্ন করছি। আচ্ছা বলুনতো সতের কোটি মানুষের জন্য কয়টা ভেন্টিলেটর রয়েছে? শুনেছি সতেরশ ষাটটির কথা। মিডিয়া রিপোর্ট যদি সত্যি হয় তাহলে বিপদটা কোথায় বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই। অনেক উন্নত দেশ তাদের দেশের বড় ছোট হাসপাতালগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। এখানে তা দেখছি না। দেশে ফিরে যাচ্ছি এই ভেবে, আমার অন্তত চিকিৎসাটা হবে। ডাকলে এ্যাম্বুলেন্স আসবে। মারা গেলে আমার ভবিষ্যৎ বংশধররা জানতে পারবে কিভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলাম। তাহলে কি একারণেই চলে যাচ্ছেন? নিশ্চুপ কূটনীতিক বললেন, খবর নিয়ে দেখেন কোথায় যেন গোলমাল হয়ে গেছে। জেনেশুনেতো নদীতে ঝাঁপ দিতে পারিনা। দেশে ফিরছি কপালে যা আছে তাই হবে। অনেক দেশই ভুল করেছে, কাজ করলে ভুল অনিবার্য। ভুল থেকে শিক্ষা না নিলে আরও ভুল হবে। যে ভুলের মাসুল দিতে হবে যুগযুগ ধরে। রাখছি, গুডবাই। বেঁচে থাকলে আবারও দেখা হবে।

বাস্তব অবস্থা বোধ করি এরকমই। আমরা প্রতিদিনই নতুন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি। এই সংকটকে আমরা শুরুতে পাত্তাই দিতে চাইনি। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করিনি। দু মাস তিন মাস পর কি হতে পারে সে নিয়ে আগাম চিন্তাও করিনি। যেমন ধরুন লকডাউন। আমরা কি সরকারিভাবে লকডাউন বলেছি? আমরা বলেছি ছুটি। তাই ভাল। কিন্তু এখন কেন বলছি লোকজন মানছে না। ছুটি হলেতো মানুষজন ছুটির মেজাজেই থাকবে। যতসব আজগুবি পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র আমাদেরকে প্রতিদিনই বোকা বানিয়েছেন। বলেছেন সব ঠিক। কোন সমস্যা আমরা দেখছি না। মিডিয়ার খবরকেও তারা উড়িয়ে দিয়েছেন একবাক্যে।   টেস্টের প্রয়োজন নেই এমন ধারণাও দিয়েছেন। এখন কেন তারা বলছেন গোটা দেশই ঝুঁকির মধ্যে। আসলেই ওসব ছিল মেকি।

আমরা সবাই কথায় কথায় হিটলারের সমালোচনা করি। কথা না শুনলে বলি এ তো দেখি হিটলারের ভাষায় কথা বলছে। কিন্তু সেই হিটলারের একটা অদ্ভুত গুন ছিল। সংবাদপত্রের প্রতিটি সংবাদকে তিনি অত্যান্ত মনোযোগ দিয়ে পড়তেন এবং ওইসব রিপোর্টের গুরুত্ব সম্পর্কে সহকর্মীদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তর্ক-বিতর্ক করতেন। খবরে দেখলাম কাওরান বাজারের একটা অংশ লকডাউন হয়ে গেছে। এটা সুখকর কোন বার্তা নয়। কাওরান বাজারের মত ঢাকার বাজারগুলো যদি সচল না থাকে তাহলে দেশে আরও বড় সংকট তৈরি হতে পারে। যা আমরা কেউই চাইনা।

লেখক, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ