1. m.a.roufekhc1@gmail.com : alokitokha :
গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন দীঘিনালার ইউএনও মোহাম্মদ উল্লাহ - আলোকিত খাগড়াছড়ি

গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন দীঘিনালার ইউএনও মোহাম্মদ উল্লাহ

  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ২ মে, ২০২০
মোঃ আবদুর রউফ:
খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ-এর স্বদিচ্ছা এবং সাহসীকতায় এবার গুচ্ছগ্রামের রেশনের চাল পেতে যাচ্ছে প্রকৃত কার্ডধারীরা। আর এতে করে পুরো উপজেলায় প্রশংসায় ভাসছেন এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা। আগামীকাল ৩ মে (রবিবার) শুরু হচ্ছে গুচ্ছগ্রামের রেশনের চাউল বিতরণের কার্যক্রম।
এর আগে করোনা ভাইরাসের কারণে লক ডাউনে থাকা গৃহবন্দী অসহায় মানুষের জনজীবণে খাদ্য সংকট নিরসনে খাগড়াছড়ির সাংসদ ও টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস গুচ্ছগ্রামবাসীর এপ্রিল-জুন মাসের আগাম রেশন বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন।
কিন্তু প্রশাসনের এমন মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বন্ধক হয়ে যাওয়া ৭৫-৮০ ভাগ রেশন কার্ড। যাদের দুঃখ লাগবে অগ্রিম রেশন দেওয়া হচ্ছে তারাই যদি রেশন না পায় তাহলে প্রশাসনিক উদ্যোগ ব্যর্থ। তাই এই মহামারী করোনা প্রতিরোধে গৃহবন্দী অসহায় প্রকৃত কার্ডধারী মানুষের ঘরে রেশনের চাউল পৌঁছে দিতে দীঘিনালা উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে পরামর্শ করে এক সাহসী ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ। যা এযাবৎকালে কেউ করেনি বা করে সফল হতে পারেনি।
আর এ সিদ্ধান্ত তিনি গত ২২ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দেন, তিনি বলেন, ‘এবার এন আইডি কার্ডের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করে রেশন বিতরণ করা হবে। যার কার্ড সে বা পরিবারের লোক গ্রহণ করতে পারবেন। কোনভাবেই বাইরের কেহ রেশন উত্তোলন করতে পারবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেশন উত্তোলন করা না হলে রেশন সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে।’ আর আগামীকাল রবিবার (৩ মে) দীঘিনালায় গুচ্ছগ্রামের এ রেশন বিতরণ শুরু হবে। এতে ইউএনওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ দীঘিনালাবাসী। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউএনওর এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় অ-উপজাতি ৪১৮৮ জন গুচ্ছগ্রামের রেশন কার্ডধারী রয়েছে। এসব কার্ডাধারীরা প্রতি মাসে ৩৫ কেজি করে চাউল এবং ৪৯ কেজি করে গম যা তিন মাস অন্তর অন্তর একসাথে পেয়ে থাকে। এসব কার্ডের রেশন বিতরণে কালোবাজারি এবং অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে অনেক। এর মধ্যে নির্ধারিত পরিমাণ থেকে চাউল কম দেওয়া, সিদ্ধ চাউলের পরিবর্তে আতপ চাউল দেওয়া, গম না দিয়ে স্বল্প মূল্যে টাকার বিনিময়ে গম ক্রয় করে নেওয়াসহ নানান অভিযোগ। এসব কারণ এবং তাদের নিত্য অভাব-অনটনের সুযোগে প্রভাবশালী  ব্যবসায়ীরা গুচ্ছগ্রামের এসব রেশন কার্ড নিজেদের কাছে বন্ধক রেখে দেন। এভাবে মোট রেশন কার্ডের প্রায় ৭৫-৮০ ভাগ রেশন কার্ডই বন্ধক দেওয়া। রেশন কার্ড বন্ধক এই অজুহাতে অনন্তকাল ধরে সরকারী রেশন খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তবে এবার সরাসরি প্রকৃত কার্ডধারীদের হাতে রেশন পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছে দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলার সচেতন মহলের সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে ডু-মারলেই দেখা যায় সেখানে ইউএনও-র প্রশংসা।
অসীম নির্বান বকুল লিখেছেন, ‘একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আপনার পরিচ্ছন্ন কর্মযজ্ঞের অনুরক্ত আমি। অল দ্য বেস্ট।’
রিয়াজ খান লিখেছেন, ‘আপনার হাতেই দীঘিনালা উপজেলার মানুষের উন্নতি হোক। আপনার জন্য দোয়া ও ভালবাসা রইল।’
কামাল বস লিখেছেন, ‘কিছু সার্থবাদী দালাল চক্রের হাতে আসল কার্ডধারীরা জিম্মি। আপনার হাত ধরে তাদের পাওনা টা বুঝে পাবে।হাজারো অসহায় মানুষ আপনাকে সারা জীবন মনে রাখবে। ধন্যবাদ স্যার।’
মোঃ সফিকুল লিখেছেন, ‘নিঃসন্দেহে সঠিক সিদ্বান্ত, এই সিদ্বান্ত স্থায়ীভাবে বলভৎ থাকলে প্রকৃত কার্ডদারী সুফল পাবে। ধন্যবাদ স্যার।’
উত্তম বড়ুয়া লিখেছেন, ‘স্যার মানবিক বিবেচনা করে অন্তত পক্ষে এবারের রেশন কার্ড এর যাবতীয় সুবিধা রেশন কার্ড এর মালিক কে দেওয়া দরকার। এটা বিবেচনা করার জন্য আমি আপনার মাধ্যমে যারা কার্ড বন্ধক রেখেছেন তাদের প্রতি বিনম্র প্রার্থনা জানাচ্ছি। তাতে সরকারের কিছুটা হলেও চাপ কমবে। ধন্যবাদ স্যার এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে।’
এম এ জলিল লিখেছেন, ‘গুচ্ছগ্রামের রেশন কার্ড যেন প্রকৃত কার্ডদারী পায় তা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করছি স্যার। কারণ নিম্নবৃত্তের কার্ডগুলো পুজিঁবাদি লোকদের কাছে বিক্রি।’ এরকম আরও শত শত মন্তব্য।
তবে দীঘিনালা উপজেলার সাবেক পিআইও মোশাররফ হোসেন লিখেছেন অন্য কথা, তিনি লিখেছেন, ‘এটা এর আগে বহুবার চেষ্টা করার পরও পারা যায়নি স্যার। আমি নিশ্চত এটা পারা যাবেওনা। কারন ৩৫০ জন রেশন হোল্ডারের চাল উত্তোলন করে গোডাউনে নিয়ে রেখে বসে থাকতে হয়। সারাদিনে ৩-৪ জন আসে। না আসার একটাই কারন কার্ডধারীর হাতে কার্ড নাই, কার্ড মহাজনের হাতে। এভাবে কয়েকদিন বসে থাকার পরও যখন চাল কেউ নেয়না তখন সভাপতি ও ট্যাগ অফিসার পড়েন বেকায়দায়। রেশন বিতরনে এরকম কড়াকড়ি আরোপ করায় দীঘিনালা উপজেলার একজন শিক্ষা অফিসার জীবন দিতে হয়েছে, যার জন্য তখনকার ইউএনও জনাব পি,কে,এম, এনামুল করিম স্যার এখনো নীরবে কাঁদেন। পাহাড়ের তিন জেলায় আজকে যারা রাঘব বোয়াল হিসেবে পরিচিত তাদের শিংহভাগই রেশনকার্ডের মজুদদাতা বা ডিলার, গোটা প্রশাসন তাদের  কাছে জিম্মি।  সাড়ে ছয় বছরের বাস্তব দেখা থেকে লিখলাম স্যার।’
সাবেক পিআইও মোশাররফ হোসেনের এমন লেখায় ফুটে উঠেছে উপজেলার রেশন কার্ড নিয়ে কালোবাজারির বাস্তব চিত্র।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় একজন করোনাক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। মহামারী এ করোনা থেকে দীঘিনালা  উপজেলাবাসীকে বাঁচাতে সামাজিক দূরত্ব, জনসচেতনতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মোঃ কাশেমকে সাথে নিয়ে তা শান্তিপূর্ণভাবে পালনের মাধ্যমে উপজেলার জনগণকে রক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ। এ নিয়ে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ সর্ব মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ, সংবাদকর্মীসহ, স্থানীয়  গণ্যমান্য, ব্যক্তিবর্গদের, বিভিন্ন প্রশংসায় ভাসছেন দীঘিনালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ।
৩১ তম বিসিএস এর প্রশাসনিক ক্যাডারে উত্তীর্ণ দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর যোগ দেন মোহাম্মদ উল্লাহ। এর আগে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গি পাড়ায় এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রশাসনিক দায়িত্ব নেওয়ার পর মাদকবিরোধী ভূমিকাসহ বিভিন্ন দখলকৃত দোকানপাট, অবৈধ বালি উত্তোলন, বাজার নিয়ন্ত্রণসহ প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও হতদরিদ্রদের জন্য সরকার কর্তৃক ত্রাণ বরাদ্দে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন, উপজেলার নিয়মিত মাসিক সভা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হয়ে দীঘিনালা উপজেলার সাধারণ জনগণ ও সকল স্তরের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘আমরা আসলে কারও প্রশংসা পাওয়ার জন্য কাজ করি না। আমি এ উপজেলায় সরকার কর্তৃক আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে চেষ্টা করেছি মাত্র। বর্তমান করোনা প্রেক্ষাপটে গুচ্ছগ্রামের রেশন প্রকৃত কার্ডধারীরা পেলে তাদের খাদ্য অভাব দূর হবে। এখানে গৃহবন্দী অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারি ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি গুচ্ছগ্রামগুলোর অগ্রিম রেশন বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ বাস্তবায়নে সার্বিকভাবে আমার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস স্যার, খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা স্যার, দীঘিনালা উপজেলার চেয়ারম্যান হাজী মোঃ কাশেম এবং স্থানীয় সেনা জোন কমান্ডারের সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। আমি আমার আগামী দিনগুলোতেও আমার সততা, নিষ্ঠা ধরে রাখতে চাই। সরকার কর্তৃক আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই। আমি এই দীঘিনালা উপজেলাকে একটি আদর্শ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সকলের সহযোগিতা চাই।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ