নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী বাজার। বন্ধ হওয়ার দীর্ঘ ৯ বছর পর আজ সোমবার সেই বাজার চালু হলো। প্রাণ ফিরে এল এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের এই স্থানটিতে।
আজ সকালে কবাখালী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাজারো পাহাড়ি-বাঙালির ভিড় বাজারের সবখানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংস, ধান, হলুদ ও গরু-ছাগল বেচাকেনা জমে উঠেছে।
জোড়াব্রিজ থেকে হাটে কাচা কলা বিক্রি করতে আসা কৃষ্ণ মনি চাকমা বলেন, ‘৯ বছর পর বাজারের পরিস্থিতি মীমাংসা হওয়ার খবর শুনে হাটে এসেছি। ঘরে বসে যে একটি কলার ছড়া ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি, সেই রকম কলার ছড়া হাটে বিক্রি করলাম ৩০০ টাকায়। বেশি দামে কলার ছড়া বিক্রি করতে পারার কারণে বাড়ির জন্য নতুন কিছু কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’
আদা, হলুদ ও মৌসুমি ফলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সমিতির থেকে নেওয়া লোনের টাকা পরিশোধ করতে না পারার কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যবসা গুটিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছি। বৃহস্পতিবার বাজার সচল হওয়ার খবর পেয়ে চলে এসেছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে এর চেয়ে বেশি জমজমাট হবে।
এতো দিন বাজার বন্ধ থাকার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনেকেই ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। আবার অনেকে ব্যবসায় গুটিয়ে চলেও গেছেন। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এসব ক্ষতির কথাও বললেন আজ।
কবাখালী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ হানিফ মিয়া বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। তিন-চার দিন থেকে পাহাড়িরা বাজারে আসা শুরু করলেও আজ রোববার হাটের দিন বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাহাড়ি এসেছে। আশা করি আগামী দিনে পাহাড়ি-বাঙালি একত্রে মিলেমিশে বাজার সচল রাখবে।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনায় চিকন মিলা চাকমা নামে এক পাহাড়ি নারীর প্রাণহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পাহাড়িরা বাজারটি বয়কট করেছিল।
পুনরায় বাজারটি চালু করার লক্ষ্যে গত ৫ নভেম্বর দীঘিনালা সেনা জোন ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দীঘিনালা সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মোঃ কাশেম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ, থানা ইনচার্জ উত্তম চন্দ্র দেব, সকল ইউপি চেয়ারম্যান, হেডম্যান-কার্বারী বাজার চালুর পক্ষে বক্তব্য রাখেন। এরপর সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সম্মিলিত উদ্যোগে পুনরায় বাজারটি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।