1. m.a.roufekhc1@gmail.com : alokitokha :
আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস - আলোকিত খাগড়াছড়ি

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে
নিউজ ডেস্কঃ

স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞের সূচনা করেছিল, একেবারে শেষ দিকে এসে পরাজয়ের আগমুহূর্তে তা রূপ নেয় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তখন তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় বেছে বেছে হত্যা করেছিল জাতির অগ্রণী শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের। এসব হত্যার কারণটি স্পষ্ট, পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা চেয়েছিল স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া দেশটিকে মেধায়-মননে পঙ্গু করে দিতে।

আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আজকের এই দিনে আমরা গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যাঁদের আমরা হারিয়েছি স্বাধীনতাসংগ্রামের সূচনা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত—অধ্যাপক জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামউদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সাহিত্যিক সেলিনা পারভীনসহ অনেককে। একই সঙ্গে সহমর্মিতা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রত্যেক শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের স্বজনদের প্রতি, যাঁরা দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে বয়ে চলেছেন আপনজনকে হারানোর বেদনা ও কষ্ট।

এদিকে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে এবং একাত্তরের পরাজিত মৌলবাদী চক্রকে প্রতিহত করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সুখি-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।

তথ্য অধিদফতরের পাঠানো এক তথ্যবিবরণীর মাধ্যমে রোববার (১৩ ডিসেম্বর) ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির বাণী

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে বহু আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তিসংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করেন। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁরই আহ্বানে গোটা জাতি মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনে চূড়ান্ত বিজয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, হানাদারবাহিনী তাদের নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করতে পেরে জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন উদ্দেশে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনীর সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বহু গুণীজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতি হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে এ এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে আরও বলেন, বুদ্ধিজীবীরা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপকার। তাদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ও গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা জাতীয় অগ্রগতির সহায়ক। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদারবাহিনী পরিকল্পিতভাবে এ দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। যা ছিল জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। রাষ্ট্রপতি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সুখি-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে পারলেই তাদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি, ১৯৭১ সালে হানাদারবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদত বরণকারী বুদ্ধিজীবীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

পৃথক এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

শেখ হাসিনা তার বাণী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৪ বছরের পাকিস্তানি বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশের আপামর জনসাধারণকে সংগঠিত করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জামায়াতসহ ধর্মান্ধ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা রাজাকার, আলবদর ও আলশামসবাহিনী গঠন করে পাক হানাদারবাহিনীকে সহায়তা করতে থাকে। আর বিজয়ের প্রাক্কালে তারা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ দেশের মেধাবী সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। স্বাধীনতা বিরোধীরা এই পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। বাংলাদেশ যাতে আর কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেটাই ছিল এ হত্যাযজ্ঞের মূল লক্ষ্য।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে প্রধানমন্ত্রী দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাত্তরের ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-মৌলবাদী চক্রের সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বপালনের আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ