শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্কঃ
চট্টগ্রামে রাত্রিকালীন যানচালকদের ঘুম তাড়াতে অন্য রকম এক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা। ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালানো বন্ধে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের বিভিন্ন স্থানে নৈশকোচ ও ট্রাকচালকদের জন্য চা-বিস্কুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে হাত–মুখ ধোয়ার ব্যবস্থাও। পাশাপাশি গল্পে গল্পে দেওয়া হচ্ছে সচেতনতামূলক পরামর্শ।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেনের উদ্যোগে ‘রিফ্রেশমেন্ট কর্নার’ নামে ব্যতিক্রমী এই সেবা চালু হয়েছে। এক মাস ধরে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় চলছে এই সেবা।
গতকাল শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, রাউজানের পাহাড়তলীর চৌমুহনী বাজার এলাকায় সড়কের পাশে পুলিশের সার্কেল কার্যালয়ের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ অস্থায়ী বিশ্রামাগার। পুলিশ সদস্যরা বেছে বেছে দূরপাল্লার নৈশকোচ ও ট্রাকগুলোকে দাঁড় করাচ্ছেন। এরপর বুঝিয়ে গাড়ি থেকে নামানো হচ্ছে চালক ও তাঁদের সহকারীদের।
বেশির ভাগ চালকই প্রথমে এটাকে পুলিশের চাঁদাবাজির নয়া কৌশল ভেবে বিভিন্ন অজুহাতে নামতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু পরে যখন দেখছেন কেটলি হাতে চা-কফি নিয়ে এগিয়ে আসছেন পুলিশ সদস্যরা, তখনই ভুল ভাঙে তাঁদের।
সার্কেল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই ও রাঙামাটি সড়কে এ রকম চার-পাঁচটি বিশ্রামাগার চালু করা হয়েছে। সেখানে নির্দিষ্টসংখ্যক পুলিশ সদস্য এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাড়ি থেকে নামানোর পর বেশ কিছুক্ষণ চালক ও সহকারীদের সঙ্গে গল্প জুড়েছেন সার্কেল এএসপি আনোয়ার হোসেনসহ পুলিশ সদস্যরা। এ সময় তাঁরা চালকদের সচেতন করতে নানা পরামর্শ দেন। ঝিমুনি প্রতিরোধে সেখানে রাখছেন হাত-মুখ ও ঘাড়ে পানি দিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও। তারপর একবার ব্যবহারোপযোগী কাপে চা, সঙ্গে বিস্কুট খাইয়ে সাবধানে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দিয়ে গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা করিয়ে দিচ্ছেন চালকদের। এমন সেবায় চাঙা ভাব আসছে চালকদের মধ্যে।
নুরুল আলম নামের এক বাসচালক বলেন, রাতে গাড়ি চালাতে অনেক সময়ই তাঁদের ঘুম চলে আসে। কিন্তু গভীর রাতে চা খাওয়া বা হাত–মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পুলিশ যে তাঁদের জন্য এতটা ভাবছে, এটা আনন্দের।
রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ রোকন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনা রোধে এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কে স্থায়ীভাবে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এতে রাত্রিকালীন দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শীতের রাতে গাড়ি চালাতে চালাতে অনেক চালকেরই ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। অসাবধানতায় প্রায়ই ঘটে যায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ কারণে চালকদের সচেতন করতেই মূলত মুখ ধোয়ার জন্য গরম পানি এবং চা-বিস্কুটের ব্যবস্থা। তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষে তো সব চালকের মুখোমুখি হওয়া বা সবার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব নয়। তাই যাঁদের পাচ্ছি, তাঁদেরই অনুরোধ করছি, তারা যেন সব সহকর্মীর কাছে আমাদের বার্তাটি পৌঁছে দেন।’ প্রথম আলো