শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
মো. আবদুর রউফ:
দুর্গম পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট একটি কুয়া। সেই কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করেন এলাকার নারী এবং কিশোরীরা। প্রতিদিন ভোরে তাদের প্রথম কাজ হলো বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের ছড়া, ঝিরি কিংবা কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করতে যাওয়া। উঁচু-নিচু পাহাড় বেয়ে পানি সংগ্রহ করে আনা এ পানি সারাদিনের জন্য খাওয়া এবং রান্নার জন্য ব্যবহার করেন তারা।
পানির জন্য ওঠানামা করতে হয় অন্তত দেড় হাজার ফুট উচ্চতার আঁকাবাঁকা পাহাড়। চিত্রটি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের তপন কুমার কার্বারীপাড়া এলাকার। এমন দুর্দশা কেবল তপন কুমার কার্বারীপাড়ার বাসিন্দাদেরই নয়। মেরুং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ১২ গ্রামের সাত শতাধিক পরিবারের এই দুর্ভোগ জন্মান্তরের। কেবল সুপেয় পানির জন্যেই বছরের পর বছর ধরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এসব মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম চলছে।
সম্প্রতি দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ১২টি গ্রামে দেখা যায় দুর্ভোগের বাস্তব চিত্র। রথীচন্দ্র কার্বারীপাড়া, তপন কুমার কার্বারীপাড়া, মিলন কুমার কার্বারীপাড়া, চন্দ্রকীরণ কার্বারীপাড়া, সীমানাপাড়া, কালীদাস কার্বারীপাড়া, তৈদুপাড়া, মায়াফাপাড়া, ভৈরফাপাড়া, সাধন মনিপাড়া, গন্ডাপাড়া ও ফরেস্ট বাগান টিলা এলাকায় সুপেয় পানির কোনো বন্দোবস্তই নেই। এসব এলাকায় মাটির নিচে পাথরের শক্ত বেষ্টনী থাকায় নলকূপ স্থাপনও সম্ভব হয় না। ফলে খোলা উৎসের পানিই একমাত্র ভরসা এসব এলাকার বাসিন্দাদের।
নয় মাইল এলাকার বাসিন্দা আশা ত্রিপুরা বলেন, ‘ভোরের আলো ফুটলেই বেরিয়ে পড়তে হয় পানির জন্য। দেরি করে গেলে পরিষ্কার পানি পাইনা। দুষ্টু বানরেরা পানি নষ্ট করে ফেলে।’ মিলন কার্বারীপাড়ার অনতি ত্রিপুরা বলেন, ‘প্রতিদিন অন্তত দুই বেলা করে পানি সংগ্রহ করি আমরা। আর এসব পানি খাওয়া এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য গণেশ চন্দ্র ত্রিপুরা জানান, ‘১নং ওয়ার্ডের ১২টি গ্রামে প্রায় ৭শতাধিক পরিবার রয়েছে। অথচ একটি গ্রামেও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। ঝিরি ও ঝর্ণা থেকেই পানি সংগ্রহ করা হয় এখানকার বাসিন্দাদের। এসব এলাকায় ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে এবং কুয়া থেকে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাড়া সংলগ্ন এলাকায় পানির ট্যাংক বসিয়ে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে তবেই এই দুর্ভোগ দূর হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে এখানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করলে ভাল হতো।’
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন নুপুর কান্তি দাস বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা খোলা উৎসের পানি ফুটিয়ে পান করেন না। ফলে দুর্গম সেসব এলাকায় দূষিত পানি পান করার ফলে তাদের বিভিন্ন অসুখ হয়। বর্ষা মৌসুমে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটব্যথাসহ পানি বাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ে।’
খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রেবেকা আহসান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ওই গ্রামগুলোতে ‘ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম’ স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এসব এলাকার সুপেয় পানির সংকট দূর হবে।’