1. m.a.roufekhc1@gmail.com : alokitokha :
তিনি শুধু প্রকৌশলীই নন- একজন প্রকৃতি প্রেমিকও - আলোকিত খাগড়াছড়ি

তিনি শুধু প্রকৌশলীই নন- একজন প্রকৃতি প্রেমিকও

  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২
মো. আবদুর রউফ:
সবুজ চাকমা, খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা। একজন সরকারি কর্মকর্তা হলেও তিনি আপাদমস্তক একজন প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ। পশু-পাখি, গাছপালা সহ সবুজায়ন নিয়ে তার রয়েছে চরম ঝোক। সম্প্রতি সময়ে বৃক্ষ রোপণ, দুর্লভ প্রজাতির পাখির সন্ধান ও খেলার মাঠ সবুজায়ন করা নিয়ে জেলা জুড়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। প্রতিটি সরকারি ছুটি তিনি এ প্রকৃতির পিছনেই ব্যয় করেন।
প্রকৃতির সৌন্দর্য হচ্ছে পাখি। এক সময় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন কারনে দিন দিন পাখির সংখ্যা কমছে। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত চারদিক এখন শূন্য ও নিষ্প্রাণ হওয়ার পথে। বর্তমানে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল ও সুরক্ষার অভাবে কমে যেতে শুরু করেছে পাখির বংশবিস্তার।
পাখির প্রতি ভালবাসা থেকে তিনি দুর্লভ প্রজাতির পাখিদের শনাক্ত করে তার হদিস শুরু করেন। দুর্গম কাচালং রিজার্ভ ফরেস্ট, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, ভারতীয় সীমান্তবর্তী বরকলের ঠেগামুখ, দীঘিনালার নাড়াইছড়ি, ধনপাতার বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে ঘুরে তিনি দুর্লভ এমন ১৭০ প্রজাতির পাখির সন্ধান বের করেন। এর মধ্যে এমন অনেক দুর্লভ পাখিও রয়েছে যা এখনই সংরক্ষণ করা না গেলে একসময় তা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। যেমন, পাকড়া ধনেশ, নীল শীষ ধামা, নীল টুপি শিলাধামা, খয়রা টুপি বাবলার, কালাঘাড় বেনেবউ, কালো ঝুটি বুলবুল, খয়ড়া মাথা সুমচা, মালায়ান নিশী বক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব দুর্লভ প্রজাতির পাখি গহীন অরণ্য ছাড়া একদম দেখা যায়না বললেই চলে।
পাখির ছবি তোলার বিষয়ে সবুজ চাকমা বলেন, “একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর পাখি দেখা গেলেও বর্তমানে অনেক কমই দেখা যায়। মুলত নির্বিচারে বন উজার ও পাখি শিকারের প্রবনতার কারনে পাখি কমে গেছে। তাই পাখির ছবি তুলে চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষের মাঝে পাখি রক্ষার্থে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্যই পাখির ছবি তুলি।”
দুর্লভ প্রজাতির পাখি সন্ধানের পাশাপাশি গাছের প্রতি ভালবাসা থেকে সূদুর আমেরিকা থেকে জ্যাকারান্ডা গাছের বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর এ বীজ নিজের নার্সারিতে প্রক্রিয়া করে গাছের চারা উৎপাদন করে তা সড়কের দুপাশে রোপণ করেন। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের দুপাশে প্রায় ২ হাজার জ্যাকারান্ডা গাছের চারা রোপণ করেন তিনি।
এ জ্যাকারান্ডা গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে, ফুলের ঘ্রাণ ছড়ায়, রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এ গাছটির আদি নিবাস হলো দক্ষিণ আমেরিকা। এরপর ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চীন সহ বিভিন্ন দেশে এ গাছের বংশবৃদ্ধি হয়েছে।
জ্যাকারান্ডা গাছ রোপনের বিষয়ে তিনি বলেন, “পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা ও সড়কগুলোকে নান্দনিক সৌন্দর্যে সাজানোই আমার গাছ লাগানোর মূল কারণ। উন্নত দেশগুলো তাদের সড়কগুলো নান্দনিক সব ফুল গাছ লাগিয়ে সাজিয়েছে। আমারাও উন্নত দেশের মত আমাদের সড়কগুলো সাজাতে পারি। সেই ইচ্ছা থেকেই আমি সড়কে জ্যাকারান্ডা গাছ লাগিয়েছি।”
এছাড়াও এক সময়ের অনুপযোগী খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের সংস্কার করেন তিনি। তবে তার এ কাজে সহযোগিতা করেন সহকারী মো. সাজ্জাদ হোসেন। বিবর্ণ উঁচুনিচু এ মাঠকে সমতল ও সবুজ ঘাসের মাঠে রুপান্তর করেন তারা। গত ৫ই জুলাই প্রথমে এ মাঠে মাটি ড্রেসিং করে পে-লোডার দিয়ে উঁচুনিচু সমান করা হয়। এরপর ঘাস লাগানোর জন্য উপযুক্ত করে মাঠে সবুজ ঘাস রোপণ করা হয়। এ ঘাস সংরক্ষণের জন্য মাঠের চতুর্দিকে বেড়া দেওয়া হয়। এভাবে প্রায় ৫ মাস মাঠের ঘাসের গভীর পরিচর্যা করে ১ লা ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠ খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। মূল পরিকল্পনা ও উদ্যোগ সবুজ চাকমার হলেও এ কাজে সবুজ চাকমার উদ্যোগের সাথে এলাকার স্থানীয় বিত্তশালী ব্যক্তিগন সহযোগীতা করেন।
খেলার মাঠ সবুজায়নের বিষয়ে সবুজ চাকমা বলেন, “খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠটি দীর্ঘদিন খেলার অনুপযোগী ছিল যার কারনে খেলোয়ারেরা কাঙ্খিত সুফল থেকে বঞ্চিত ছিল। এছাড়া বর্তমান প্রজম্মের সদস্যরা মোবাইল ফোনে আসক্ত।  তাই নতুন প্রজম্মের ব্যবহার উপযোগী মাঠ তৈরি করে তাদেরকে খেলার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করার উদ্যেশ্যেই আমরা এ মাঠটি সংস্কার ও সবুজায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। এ কাজে সমাজের অনেক বিত্তশালির সহযোগীতা পেয়েছি তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ