1. m.a.roufekhc1@gmail.com : alokitokha :
"আমরা মানুষ নই, বিদ্যুৎকর্মী" - আলোকিত খাগড়াছড়ি

“আমরা মানুষ নই, বিদ্যুৎকর্মী”

  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০
সুভাষ চৌধুরী;
আমাদের কারো বাবা হওয়া উচিত ছিল না, আমাদের থাকতে নেই প্রিয়জন। বিদ্যুৎ কর্মীদের মৃত্যভয় থাকতে নেই। Covid-19 এর ভয়ে সারাবিশ্ব যখন মৃত্যুভয়ে কম্পমান, বৈশাখী ঝড়বৃষ্টিতে ভিজে হিমে শরীর বরফ হয়ে বিদ্যুৎকর্মীদের রক্ত চলাচল বন্ধ প্রায়।
আমাদের কোন উৎসব থাকতে নেই, প্রয়োজন নেই প্রিয়জনের সংগে সময় কাটানোর, কিংবা প্রিয়জনদেরকে নিয়ে কোন উৎসবে যাওয়া- সবাই যখন কোন উৎসবে পরিবার নিয়ে আলো ঝলমলে অনুষ্ঠানে আনন্দে মত্ত, আমরা তখন তাদের আলোকসজ্জা নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য- নিয়ন্ত্রণ কক্ষে, নির্জন জায়গায়,হাওরের কোন এক ট্রান্সফরমারের নীচে দন্ডায়মান। নয়তো-বা খুঁটির শীর্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে ব্যস্ত।
বৈশাখী ঝড়ে প্রায় প্রতিদিনই গাছপালা ভেঙে শাখাপ্রশাখা পড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে অথবা ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে। নয়তোবা পোল/ক্রসআর্ম/ইনসুলেটর ভেঙেছে, সারা দিনমান তা মেরামত করে বিকাল অথবা সন্ধ্যায় আলো জ্বলে। পূনরায় রাতে ঝড়তুফানের পুনরাবৃত্তি ঘটে। পরদিন একই নিয়মে অমানবিক কষ্টে বিদ্যুৎকর্মী কাজ করে যায়। সারাদিন কতো কথা- বকা আর চোখরাঙানী বয়ান শুনতে হয়! হোটেল, দোকান বন্ধ। লকডাউন অন্নহীন উদর,শরীর চলে না। তারপরও হাসপাতালের জরুরি কাজে, প্রশাসনের জরুরি যোগাযোগের প্রয়োজনে, মোবাইল, লেপটপ চার্জ দেয়ার জন্যে, করোনা-১৯ এর আপডেট দেখার তাগিদে- নয়তোবা ঘরকে আলোকিত করার প্রয়োজনে, কারখানার উৎপাদনে, এমনকি ফ্রিজের জমাকৃত খাদ্য সতেজ রাখার জন্যে- পানি উত্তোলনের জরুরি কাজে- বিদ্যুৎ এর তো প্রয়োজন আছেই! কিন্তু কি করবো,কতটুকু? কতক্ষণ? চালিয়ে যাব এ অক্লান্ত পরিশ্রম?
আমরা উপস্থিত কি না, বাতি জ্বলা নিভায় বুঝা যায়। কতটা কতক্ষণ অসামর্থ্য নিক্তিতে মাপা যায়, বাতি নিভে গেছে মানে- বিদ্যুৎ ডিপার্টমেন্ট কাজ করছে না! আসলে বৈরী আবহাওয়ায় ওভারহেড লাইনে পল্লী অঞ্চলে গাছ-বাশেঁর মধ্যে বিদ্যুৎ সচল রাখা যায়না। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০ জন বিদ্যুৎকর্মী বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যায়। অথচ আমাদের কোন ঝুঁকি অথবা জরুরী ভাতা নেই। নাই কোন প্রণোদনা অথবা পজিটিভ প্রচার। কারণ আমাদেরকে ডিজিটাল নিক্তি দিয়ে প্রতিমুহূর্তেই মাপা যাচ্ছে। দেশের অন্যান্য খাতের ব্যর্থতা কিছু দু-চোঁখে পড়লেও মনে ধরেনা। ভাঙা রাস্তায় কোমড় ব্যথা হয়ে গেলেও কাউকে ফোন করে বলা যায় না, বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালের সামনে রোগী মারা গেলেও ভাগ্যে মৃত্যু লেখা ছিল শান্তনা নেয়া হয়। লক্ষ ২ মামলা পেন্ডিং, হাজতে পার করছে বিনা বিচারে কত মিথ্যা আসামি, কাউকে ফোন করে বলা যায় না, কত আদার বেপারী জাহাজের মালিক হয়ে গেল- কিভাবে হলো জিজ্ঞেস করা যায় না। আমাদেরকেই মূহুর্তে জিজ্ঞেস করা যায়। হ্যাঁ এটা সন্মানিত গ্রাহকের অধিকার কিন্তু জবাবদিহিতা সম্প্রসারিত হউক সকলক্ষেত্রে।
দোয়া চাই, আমরা যেন সেবা দেয়ার আরো শক্তি পাই। সবিনয়ে জানাতে চাই, আমরা শুধুই বিদ্যুৎ কর্মী নই, আমরাও মানুষ। ব্যার্থতা আছে, প্রচেষ্টাও আছে, একদিন হয়তো সবই ঠিক হয়ে যাবে।
এই আবেগ গন কথা গুলো গোপন রাখা কষ্টকর। কোবিড ১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে যখন সকলে ঘরে নিরাপদে আছেন ঠিক তখনই করোনা যোদ্ধা হিসাবে রাত দিন মাঠে ময়দানে বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ কর্মীরা অথচ ঝুঁকিতে থেকেও তাদের নেউ কোন ঝুঁকি ভাতা।
লেখক,- সুভাষ চৌধুরী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, আবাসিক প্রকৌশলী, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি)।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ